(৫৫:৪৬)
আর যারা তাদের প্রভুর সামনে হাজির হওয়ার ব্যাপারে ভয় পায় ৪০ তাদের প্রত্যেকের জন্য আছে দু’টি করে বাগান৷৪১
(৫৫:৪৭)
তোমাদের রবের কোন্ কোন্ দানকে তোমরা অস্বীকার করবে? ৪২
(৫৫:৪৮)
তরুতাজা লতাপাতা ও ডালপালায় ভরা ৷
(৫৫:৪৯)
তোমাদের রবের কোন্ কোন্ দানকে তোমরা অস্বীকার করবে?
(৫৫:৫০)
উভয় বাগানে দু’টি ঝর্ণা প্রবাহিত থাকবে৷
(৫৫:৫১)
তোমাদের রবের কোন্ কোন্ দানকে তোমরা অস্বীকার করবে?
(৫৫:৫২)
উভয় বাগানের প্রতিটি ফলই হবে দু’রকমের ৷৪৩
(৫৫:৫৩)
তোমাদের রবের কোন্ কোন্ দানকে তোমরা অস্বীকার করবে?
(৫৫:৫৪)
জান্নাতের বাসিন্দারা এমন সব ফরাশের ওপর হেলান দিয়ে বসবে যার আবরণে হবে পুরু রেশমের ৪৪ এবং বাগানের ছোট ছোট শাখা-প্রশাখা ফলভারে নূয়ে পড়তে থাকবে৷
(৫৫:৫৫)
তোমরা তোমাদের রবের কোন্ কোন্ দান অস্বীকার করবে?
(৫৫:৫৬)
এসব নিয়ামতের মধ্যে থাকবে লজ্জাবনত চক্ষু বিশিষ্ট ললনারা ৪৫ যাদেরকে এসব জান্নাতবাসীদের আগে কোন মানুষ বা জিন স্পর্শ করেনি৷ ৪৬
(৫৫:৫৭)
তোমাদের রবের কোন্ কোন্ দানকে তোমরা অস্বীকার করবে?
(৫৫:৫৮)
এমন সুদর্শনা, যেমন হীরা এবং মুক্তা৷
(৫৫:৫৯)
তোমাদের রবের কোন্ কোন্ দান তোমরা অস্বীকার করবে?
(৫৫:৬০)
সদাচারের প্রতিদান সদাচার ছাড়া আর কি হতে পারে? ৪৭
(৫৫:৬১)
হে জিন ও মানুষ, এরপরও তোমরা তোমাদের রবের মহত গুণাবলীর কোন্ কোনটি অস্বীকার করবে? ৪৮
(৫৫:৬২)
ঐ দু’টি বাগান ছাড়া আরো দু’টি বাগান থাকবে৷ ৪৯
(৫৫:৬৩)
তোমাদের রবের কোন্ কোন্ দান তোমরা অস্বীকার করবে?
(৫৫:৬৪)
নিবিড়, শ্যামল-সবুজ ও তরুতাজা বাগান৷৫০
(৫৫:৬৫)
তোমাদের রবের কোন্ কোন্ দান তোমরা অস্বীকার করবে৷
(৫৫:৬৬)
উভয় বাগানের মধ্যে দু’টি ঝর্ণাধারা ফোয়ারার মত উৎক্ষিপ্ত হতে থাকবে৷
(৫৫:৬৭)
তোমাদের রবের কোন্ কোন্ দান তোমরা অস্বীকার করবে৷
(৫৫:৬৮)
সেখানে থাকবে প্রচুর পরিমাণে ফল, খেজুর ও আনার৷
(৫৫:৬৯)
তোমাদের রবের কোন্ কোন্ দান তোমরা অস্বীকার করবে?
(৫৫:৭০)
এসব নিয়ামতের মধ্যে থাকবে সচ্চরিত্রের অধিকারীনী সুন্দরী স্ত্রীগণ৷
(৫৫:৭১)
তোমাদের রবের কোন্ কোন্ দান তোমরা অস্বীকার করবে?
(৫৫:৭২)
তাঁবুতে অবস্থানরত হুরগণ৷৫১
(৫৫:৭৩)
তোমাদের রবের কোন্ কোন্ দান তোমরা অস্বীকার করবে?
(৫৫:৭৪)
এসব জান্নাতবাসীদের পূর্বে কখনো কোন মানুষ বা জিন তাদের স্পর্শও করেনি৷
(৫৫:৭৫)
তোমাদের রবের কোন কোন দান তোমরা অস্বীকার করবে৷
(৫৫:৭৬)
ঐ সব জান্নাতবাসী সবুজ গালিচা ও সুক্ষ্ম পরিমার্জিত অনুপম ফরাশের ৫২ ওপর হেলান দিয়ে বসবে৷
(৫৫:৭৭)
তোমাদের রবের কোন্ কোন্ দান তোমরা অস্বীকার করবে?
(৫৫:৭৮)
তোমার মহিমান্বিত ও দাতা রবের নাম অত্যন্ত কল্যাণময়৷
|
৪০. অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে পৃথিবীতে জীবন যাপন করেছে, সবসময় যার এ
উপলব্ধি ছিল যে, পৃথিবীতে আমাকে দায়িত্বহীন এবং লাগাম বিহীন উটের মত মুক্ত
স্বাধীন করে ছেড়ে দেয়া হয়নি৷ আমাকে একদিন আমার রবের সামনে দাঁড়াতে হবে এবং
নিজের সব কাজ-কর্মকের হিসেব দিতে হবে৷ এ আকীদা -বিশ্বাস যার মধ্যে থাকবে
অনিবার্যভাবেই সে প্রবৃত্তির দাসত্ব থেকে রক্ষা পারে, এলোপাথাড়ি, যে কোন
পথ ধরেই চলতে শুরু করবে না৷ ন্যায় ও অন্যায়, জুলুম ও ইনসাফ পাক ও না-পাক
এবং হালাল ও হারামের মধ্য পার্থক্য করবে৷ আর জেনে বুঝে আল্লাহর আনুগত্য
থেকে মুখ ফিরিয়ে নেব না৷ পরে যে প্রতিদানের কথা বলা হচ্ছে এটাই তার প্রকৃত
কারণ৷
৪১. জান্নাত শব্দের অর্থ বাগান৷ আখেরাতের জীবনে সৎ মানুষদেরকে যেখানে রাখা হবে
কুরআন মজীদের কোথাও সেই পুরো স্থানটিকে জান্নাত বলা হয়েছে৷ অর্থাৎ তা যেন
সবটাই একটা বাগান৷ কোথাও বলা হয়েছে তাদের জন্য থাকবে বাগানসমূহ যার
পাদদেশ দিয়ে নদী ও ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হতে থাকবে৷ এর অর্থ সেই বিশাল
বাগানের মধ্যে ছোট ছোট অনেক বাগান হবে৷ আর এখানে নির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে
যে, সেই বিশাল বাগানের মধ্যে প্রত্যেক নেককার ব্যক্তিকে দুটি করে বাগান
দেয়া হবে৷ ঐ দুটি বাগান কেবল তার জন্যই নির্দিষ্ট হবে৷ তার মধ্যে থাকবে তার
প্রাসাদ৷ সেখানে সে তার চাকর-বাকর ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে বাদশাহী ঠাটবাট
ও জাঁকজমকের সাথে অবস্থান করবে৷ তাকে যেসব সাজ-সরঞ্জম দেয়ার কথা পরে বলা
হয়েছে সেখানেই তাকে তা সরবরাহ করা হবে৷
৪২. এখান থেকে সূরার শেষ পর্যন্ত ( ) শব্দটি নিয়মতরাজি ও অসীম ক্ষমতা উভয় অর্থে
ব্যবহৃত হয়েছে৷ তাছাড়া এর মধ্যে মহত গুণাবলীর দিকটিও প্রতিভাত হয়েছে৷
প্রথম অর্থটি গ্রহণ করা হলে বর্ণনার এ ধারাবাহিকতার মধ্যে এ বাক্যাংশটি
বারবার উল্লেখ করার অর্থ হবে তোমরা অস্বীকার করতে চাইলে করতে থাক৷
আল্লাহভীরু লোকেরা তাদের রবের পক্ষ থেকে এসব নিয়ামত অবশ্যই লাভ করবেন৷
দ্বিতীয় অর্থ গ্রহণ করা হলে তার সারকথা হবে, তোমাদের মতে আল্লাহ তা'আলার
জান্নাত তৈরী করা এবং সেখানে তাঁর নেক বান্দাহদেরকে এসব নিয়ামত দান করা
অসম্ভব হয়ে থাকলে হোক৷ কিন্তু আল্লাহ নিশ্চিতভাবে তা করতে সক্ষম এবং তিনি
অবশ্যই তা করবেন৷ তৃতীয় অর্থ অনুসার এর তাৎপর্য হচ্ছে, তোমরা মনে কর
আল্লাহ তা'আলা ভাল ও মন্দের মধ্যে পার্থক্য করেন না৷ তোমাদের কথা অনুসারে
এর অর্থ দাঁড়ায়, তিনি এ বিশাল পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন ঠিকই৷ কিন্তু এখানে কেউ
জুলুম করলো না ইনসাফ, ন্যায় ও সত্যের জন্য কাজ করলো না বাতিলের জন্য এবং
অকল্যাণের প্রসার ঘটালো না কল্যাণের তার কোন পরোয়াই তিনি করেন না৷ তিনি
জালেমকেও শাস্তি দেন না, মজলুমের ফরিয়াদও শোনেন না ৷ ভালো কাজের মূল্যও
বুঝেন না, মন্দ কাজকেও ঘৃণা করেন না৷ তোমাদের ধারণা অনুসারে তিনি অক্ষমও
বটে৷ তিনি যমীন ও আসমান ঠিকই বানাতে পারেন, কিন্তু জালেমদেরকে শাস্তি দেয়ার
জন্য দোজখ এবং ন্যায় ও সত্যের অনুসারীদের প্রতিদান দেয়ার জন্য জান্নাত
নির্মাণ করে সক্ষম নন৷ তাঁর এসব মহত গুণাবলীকে আজ যত ইচ্ছা তোমরা অস্বীকার
করতে থাকো৷ কাল যখন তিনি সত্যি সত্যি জালেমদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ
করবেন এবং ন্যায় ও সত্যের অনুসারীদেরকে জান্নাতে এসব নিয়ামত দান করবেন, সে
সময়ও কি তোমরা তার এসব গুণাবলী অস্বীকার করতে পারবে?
৪৩. একথার একটা অর্থ হতে পারে এই যে, উভয় বাগানের ফলই হবে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের
এবং স্বতন্ত্র বৈশিষ্টপূর্ণ৷ এক বাগানে গেলে গাছের শাখা প্রশাখায় প্রচুর
ফল দেখতে পাবে৷ অপর বাগানে গেলে সেখানকার ফলের অবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন দেখতে
পাবে৷ দ্বিতীয় অর্থ হতে পারে এর প্রতিটি বাগানের এক প্রকারের ফল হবে তার
পরিচিত৷ তার সাথে সে দুনিয়াতেও পরিচিত ছিল-যদিও তা স্বাদে দুনিয়ার ফল থেকে
অনেক শ্রেষ্ঠ হবে৷ আর আরেক প্রকার ফল হবে বিরল ও অভিনব জাতের -দুনিয়ায় যা
সে কোন সময় কল্পনাও করতে পারিনি৷
৪৪. অর্থাৎ তার আবরণই যেখানে এরূপ সেখানে তার ওপরের আচ্ছাদনকারী চাদর কেমন হবে তা অনুমান করে দেখ৷
৪৫. নারীর প্রকৃত সৌন্দর্য হচ্ছে লজ্জাহীনা ও বাচাল না হওয়া এবং সলজ্জ দৃষ্টি
সম্পন্ন হওয়া৷ এ কারণে জান্নাতের নিয়াতমসমূহের অন্যতম নিয়ামত নারী সম্পর্কে
বলতে গিয়ে আল্লাহ তা'আলা সর্বপ্রথম তার রূপ ও সৌন্দর্যের কথা না বলে তার
লজ্জাশীলতা ও সতীত্বে প্রশংসা করেছেন৷ সুন্দরী মেয়েরা তো নারী ও পুরুষের
যৌথ ক্লাব-সমূহে এবং চলচ্চিত্র নির্মাণ কেন্দ্র চিত্রপুরীতেও সমবেত হয়ে
থাকে৷ আর সুন্দরী প্রতিযোগীতায় বেছে বেছে সুন্দরী নারীদের নিয়ে আসা হয়৷
কিন্তু শুধু বিকৃত রুচিবোধ সম্পন্ন ও দুশ্চরিত্র লোকেরাই এদের ব্যাপারে
আগ্রহী হতে পারে৷ যে সুন্দরী নারী যে কোন কাম দৃষ্টিকে তার সৌন্দর্য
ভোগের আহবান জানায় এবং যে কোন বাহু বন্ধনে আবদ্ধ হতে প্রস্তুত হয় তা কেন
ভদ্র ও রুচিবান মানুষের আকৃষ্ট করতে পারে না৷
৪৬. এর অর্থ, পার্থিব জীবনে কোন নারী কুমারী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে থাকুক
কিংবা কারো স্ত্রী থেকে থাকুক, যৌবনে মৃত্যুবরণ করে থাকুক কিংবা
বৃদ্ধাবস্থায় দুনিয়া ছেড়ে যেয়ে থাকুক, এসব নেককার নারীরা আখেরাতে যখন
জান্নাতে প্রবেশ করবে তখন তাদেরকে যুবতী ও কুমারী বানিয়ে দেয়া হবে৷ সেখানে
তাদের মধ্য থেকে যাকেই কোন নেককার পুরুষের জীবন সঙ্গিনী বানানো হবে
জান্নাতে সে তার জান্নাতী স্বামীর পূর্বে আর কারো সাহচর্য লাভ করবে না৷ এ
আয়াত থেকে একথাটিও জানা যায় যে, নেককার মানুষের মত নেককার জিনরাও জান্নাতে
প্রবেশ করবে এবং সেখানে মানুষ ও পুরুষের জন্য যেমন মানুষ নারী থাকবে তেমনি
জিন পুরুষদের জন্য জিন নারাও থাকবে উভয়ের সাথে বন্ধনের জন্য উভয়ের নিজ
প্রজাতির জোড়া বাঁধা হবে৷ কোন ভিন্ন প্রজাতির সৃষ্ট জীবের সাথে তাদের
জোড়া বাঁধা হবে না৷ কারণ প্রকৃতিগতভাবেই তারা তাদের সাথে নিজেদের খাপ
খাওয়াতে সক্ষম নয়৷ "তাদের পূর্বে কোন মানুষ বা জিন তাদের ষ্পর্শ করবে না"
আয়াতে উল্লেখিত একথার অর্থ এ নয় যে, সেখানে নারীরা সবাই হবে মানুষ এবং
তাদের জান্নাতী স্বামী স্পর্শ করার পূর্বে তারা কোন মানুষ বা জিনের স্পর্শ
লাভ করবে না৷ একথার প্রকৃত অর্থ হলো সেখানে জীন ও মানুষ উভয় প্রজাতির
নারী থাকবে৷ তারা সবাই হবে লজ্জাশীলা ও অস্পর্শিতা৷ কোন জিন নারীও তার
জান্নাতী স্বামীর পূর্বে অন্যকোন জিন পুরুষ কর্তৃক স্পর্শিতা হবে না,
কোন মানুষ নারীও তার জান্নাতী স্বামীর পূর্বে অন্য কোন মানুষ পুরুষ
কর্তৃক স্পর্শিত ও অপবিত্রা হবে না৷
৪৭. অর্থাৎ যেসব মানুষ আল্লাহ তা'আলার জন্য সারা জীবন পৃথিবীতে নিজেদের
প্রবৃত্তির ওপর বিধি-নিষেধ ও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে রেখেছিল, হারাম থেকে
আত্মরক্ষা করে হালালের ওপর সন্তুষ্ট থেকেছে, ফরযকে ফরয মনে করে নিজের
দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহ পালন করেছে, ন্যায় ও সত্যকে ন্যায় ও সত্য মনে করে
হকদারদের হক -সমূহ আদায় করেছে এবং সর্বপ্রকার দুঃখ-কষ্ট বরদাশত করে অন্যায় ও
অকল্যাণের বিরুদ্ধে ন্যায় ও কল্যাণকে সমর্থন করেছে৷ আল্লাহ তাদের এসব
ত্যাগ ও কুরবানীকে ধ্বংস ও ব্যর্থ করে দেবেন এবং কখনো এর কোন প্রতিদান
তাদের দেবেন না তা কি করে সম্ভব?
৪৮. একথা স্পষ্ট, যে ব্যক্তি জান্নাত ও সেখানকার প্রতিদান ও পুরস্কার অস্বীকার
করে প্রকৃতপক্ষে সে আল্লাহ তা'আলার বহুসংখ্যক উত্তম গুণাবলী অস্বীকার করে৷
সে আল্লাহকে মানলেও তাঁর সম্পর্কে অনেক খারাপ ধারণা পোষণ করে৷ তার মতে,
আল্লাহ একজন অবিবেচক রাজা যার আইন-কানুন বিহীন রাজত্বে ভাল কাজ করা কোন
কিছু পানিতে নিক্ষেপ করার শামিল৷ সে তাঁকে অন্ধ ও বধির বলে মনে করে৷ তাঁর
বিশাল রাজ্যে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যকে প্রাণ, সম্পদ, প্রবৃত্তির
কামনা-বাসনা এবং শ্রমের কুরবানী পেশ করছে সে খবর তিনি আদৌ রাখেন না৷ কিংবা
সে মনে করে তিনি অনুভূতিহীন ও কোন কিছুর যথাযথ মুল্যায়ণ অক্ষম-যার কাছে
ভাল ও মন্দের কোন পার্থক্য নেই৷ অথবা তার মতে, তিনি অক্ষমও অপদার্থ৷ তাঁর
কাছে নেক কাজের যতই মূল্য থাক না কেন, তার প্রতিদান দেয়ার সাধ্য তাঁর নেই৷ এ
কারণে বলা হয়েছে, আখেরাতে তোমাদের চোখের সামনে যখন নেক কাজের উত্তম
প্রতিদান দেয়া হবে, তখনও কি তোমরা তোমাদের রবের মহত গুণাবলী অস্বীকার
করতে পারবে?
৪৯. মূল আয়াতে ব্যবহৃত বাক্যাংশ হলোঃ ( ) আরবী ভাষায় ( ) শব্দটি তিনটি ভিন্ন
ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়৷ এক, কোন উঁচু জিনিসের তুলনায় নীচু হওয়া অর্থে৷
দুই, কোন উত্তম ও উৎকৃষ্ট জিনিসের তুলনায় নিম্নমানের হওয়া অর্থে৷ তিন,
কোন জিনিসের চেয়ে অতিরিক্ত হওয়া অর্থে৷ অর্থের এ ভিন্নতার কারণে
বাক্যাংশের এ অর্থেরও সম্ভবনা বিদ্যমান যে, এ দু'টি বাগান ছাড়াও প্রত্যেক
জান্নাতীকে আরো দু'টি বাগান দেয়া হবে৷ দ্বিতীয় সম্ভবনা হচ্ছে, এ দু'টি
বাগান ওপরে উল্লেখিত বাগান দুটির তুলনায় অবস্থান ও মর্যাদায় নীচু মানের
হবে৷ অর্থাৎ পূর্বোক্ত দুটি বাগান হয়তো উচ্চস্থানে অবস্থিত হবে এবং দুটি
তার নীচে অবস্থিত হবে কিংবা প্রথমোক্ত বাগান দুটি অতি উন্নতমানের হবে এবং
তার তুলনায় এ দুটি নিম্নমানের হবে৷ প্রথম সম্ভবনা মেনে নিলে তার অর্থ হবে,
ওপরে যেসব জান্নাতীদের কথা বলা হয়েছে অতিরিক্ত এ দুটি বাগানও হবে তাদেরই৷
আর দ্বিতীয় অর্থের সম্ভবনা মেনে নেয়ার ক্ষেত্রে অর্থ হবে প্রথমোক্ত দুটি
বাগান হবে "মুকাররাবীন"বা আল্লাহর নৈকট্য লাভকারী বান্দাদের জন্য এবং এ
দুটি বাগান হবে "আসহাবুল ইয়ামীন"-দের জন্য৷ দ্বিতীয় অর্থের সম্ভবনাটি যে
কারণে দুটি দৃঢ় ভিত্তি লাভ করছে তা হলো, সূরা ওয়াকি'আয় সৎকর্মশীল মানুষদের
দুটি শ্রেণীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে৷ একটি "সাবেকীন"বা অগ্রবর্তীগণ৷
তাদেরকে "মুকাররাবীন "বা নৈকট্য লাভকারীও বলা হয়েছে৷ অপরটি "আসহাবুল
ইয়ামীন"৷ তাদেরকে "আসহাবুল মায়মানা"নামেও আখ্যায়িত করা হয়েছে৷ সুতরাং তাদের
উভয় শ্রেণীর জন্য দুটি আলাদা বৈশিষ্ট্যের জান্নাতের কথা বলা হয়েছে৷
তাছাড়া আবু মূসা আশ'আরী, থেকে তাঁর পুত্র আবু বকর যে হাদীস বর্ণনা করেছেন
সে হাদীসটিও এ সম্ভবনাকে জোরদার করছে৷ আবু মুসা আশ'আরী বর্ণিত উক্তি
হাদীসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ সাবেকীন
অগ্রগামী বা "মুকাররাবীন"-নৈকট্য লাভকারীদের জন্য যে দুটি জান্নাত হবে তার
পাত্র ও আসবাবপত্রসমূহের প্রতিটি জিনিস হবে স্বর্ণের৷ আর 'তাবেয়ীন'বা
আসহাবুল ইয়ামীন"দের জন্য যে দুটি জান্নাত হবে তার পাত্র ও আসবাবপত্রসমূহ
হবে রৌপ্যের ( ফাতহুল বারী, কিতাবুত তাফসীর, তাফসীরে সূরা আর রাহমান) ৷
৫০. এসব বাগানের পরিচয় দানের জন্য ( ) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে৷ ( ) বলা হয় এমন
ঘন নিবিড় শ্যামলতাকে যা মাত্রারিক্ত হওয়ার কারণে অনেকটা কাল বর্ণ ধারণ
করেছে৷
৫১. 'হুর' শব্দের ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা সাফ্ফাতের তাফসীর,
টীকা ২৮-২৯ এবং সূরা দুখানের তাফসীর টীকা ৪২৷ রাজা বাদশাহ ও আমীর উমরাদের
জন্য প্রমোদ কেন্দ্রসমূহে যে ধরনের তাঁবু খাটানো হয়ে থাকে এখানে তাঁবু
বলতে সম্ভবত সেই ধরনের তাঁবু বুঝানো হয়েছে৷ জান্নাতবাসীদের স্ত্রীগণ
সম্ভবত তাদের সাথে প্রসাদে বাস করবে এবং তাদের জন্য বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত
প্রমোদ কেন্দ্রসমূহের তাঁবুতে হুরগণ তাদের জন্য আনন্দ স্ফূর্তি ও আরাম
-আয়েশের উপকরণ সরবরাহ করবে৷ আমাদের এ ধারণার ভিত্তি হচ্ছে, প্রথমে উত্তম
চরিত্র ও সুদর্শনা স্ত্রীদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে৷ তারপর স্বতন্ত্রভাবে
আবার হুরদের কথা উল্লেখ করার অর্থ হচ্ছে, এরা হবে স্ত্রীদের থেকে ভিন্ন
প্রকৃতির নারী৷ উম্মে সালামা কর্তৃক বর্ণিত হাদীস থেকে এ ধারণা আরো দৃঢ়
ভিত্তি লাভ করে৷ তিনি বলেছেন "আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রসূল পৃথিবীর নারীরাই উত্তম না
হুরেরা?রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জবাব দিলেনঃ হুরদের
তুলনায় পৃথিবীর নারীদের মর্যাদা ঠিক ততটা বেশী যতটা বেশী মর্যাদা আবরণের
চেয়ে তার ভিতরের বস্তুর৷ আমি জিজ্ঞেস করলাম এর কারণ কি? তিনি বললেনঃ কারণ,
পৃথিবীর নারী নামায পড়েছে, রোযা রেখেছে এবং ইবাদত -বন্দেগী করেছে৷ " (
তাবারানী) এথেকে জানা যায় যেসব নারীরা দুনিয়াতে ঈমান এনেছিল এবং নেক কাজের
ওপর প্রতিষ্ঠিত থেকেই দুনিয়া থেকে বিদায় হয়েছিলা তারাই হবে জান্নাতবাসীদের
স্ত্রী৷ তারা নিজেদের ঈমান ও নেক আমলের ফলশ্রুতিতে জান্নাতে যাবে এবং
একান্ত নিজস্বভাবেই জান্নাতের নিয়ামত লাভের অধিকারিনী হবে৷ তারা নিজেদের
ইচ্ছা ও পছন্দ অনুসারে হয় নিজেদের পূর্বতন স্বামীদের স্ত্রী হবে-যদি তারাও
জান্নাতবাসী হয়৷ নয়তো আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে অন্য কোন জান্নাতবাসী
পুরুষের সাথে বিয়ে দিয়ে দেবেন যদি তারা উভয়েই পরস্পরে সাহচর্য ও বন্ধুত্ব
পছন্দ করে৷ এরপর থেকে হুরদের বিষয়টি৷ তারা নিজেদের কোন নেক কাজের
ফলশ্রুতিতে নিজ অধিকারের ভিত্তিতে জান্নাতবাসিনী হবে না৷ বরং জান্নাতের
অন্যান্য নিয়ামতের মত একটি নিয়ামত হিসেবে আল্লাহ তাদেরকে যুবতী, সুন্দরী ও
রূপবতী নারীর আকৃতি দিয়ে জান্নাতবাসীদেরকে নিয়ামত হিসেবে দান করবেন যাতে
তারা তাদের সাহচার্য উপভোগ করতে পারে৷ তবে কোন অবস্থাতেই তারা জিন বা পরী
শ্রেণীর কোন সৃষ্ট জীব হবে না৷ কারণ, মানুষ কখনো ভিন্ন প্রজাতির
সান্নিধ্যে ও সাহচর্যে অভ্যস্ত ও তৃপ্ত হতে পারে না৷ এ কারণে, খুব সম্ভব
তারা হবে সেই সব নিষ্পাপ মেয়ে যারা প্রাপ্ত বয়স্কা হওয়ার আগেই মৃত্যুবরণ
করেছিল৷ তাদের পিতা-মাতাও জান্নাত লাভ করেনি যে, সন্তান হিসেবে পিতা-মাতার
সাথে জান্নাতে থাকার সুযোগ পাবে৷
৫২. মূল আয়াতে ( ) শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে৷ জাহেলী যুগের আরবীয় কিচ্ছা-কাহিনীতে
জিনদের রাজধানীর নাম ছিল আবকার৷ বাংলা ভাষায় আমরা যাকে পরিস্থান বলে থাকি৷ এ
কারণে আরবের লোকেরা প্রতিটি উৎকৃষ্ট ও দুষ্প্রাপ্য বস্তুকে আবকারী বলতো৷
অর্থাৎ তা যেন পরীস্থানের বস্তু, দুনিয়াতর সাধারণ কোন বস্তু তার সমকক্ষ
নয়৷ এমনকি যে ব্যক্তি অসাধারণ যোগ্যতার অধিকারী যার দ্বারা অদ্ভুত ও
বিস্ময়কর কার্যাদি সম্পন্ন হয় তাদের পরিভাষায় তাকেও আবকারী বলতো৷ ইংরেজী (
Genius) শব্দটিও এ অর্থেই বলা হয়ে থাকে এ শব্দটিও আবার Geni শব্দ থেকে
গৃহীত যা জিন শব্দের সমার্থক৷ এ কারণে আরববাসীদেরকে জান্নাতের সাজ-সরঞ্জাম ও
আসবাসপত্রের অস্বাভাবিক উৎকৃষ্ট ও সুন্দুর হওয়ার ধারণা দেয়ার জন্য আবকারী
শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে৷
|